Publish: Wednesday August 4, 2021 | 1:41 am | অনলাইন সংস্করণ
নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার ৭ নম্বর একলাশপুর ইউনিয়নে একটি মাদ্রাসায় খাবার খেয়ে অসুস্থ হওয়ার পর এক ছাত্রের মৃত্যু হয়েছে।
এ ঘটনায় অসুস্থ হয়ে আরও ১৭ ছাত্র হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। অসুস্থদের মধ্যে রিফাত হোসেন (৯) নামের এক ছাত্রকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।
এদিকে ওই মাদ্রাসায় ছাত্রদের জন্য পরিবেশনকৃত খাবারে যে কোনো ধরনের বিষাক্ত দ্রব্য মিশানো হয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছেন অসুস্থ ছাত্রদের স্বজনরা। এ ঘটনার বিষয়ে জেলা প্রশাসন ও সিভিল সার্জন কার্যালয়ের সমন্বয়ে তিন সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
সোমবার রাতে উপজেলার পূর্ব একলাশপুর গ্রামের মদিনাতুল উলুম ইসলামিয়া মাদ্রাসা কমপ্লেক্স ও এতিমখানায় রাতের খাবারের পর এ ঘটনা ঘটে।
মঙ্গলবার বিকালে নিহত ছাত্র নিশান নুর হাদীর চাচা আহসান উল্যাহ বাদী হয়ে বেগমগঞ্জ থানায় ৮ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেছেন। ঘটনায় পুলিশ ওই মাদ্রাসার তত্ত্বাবধায়ক, তিন শিক্ষক ও কমিটির দুই সদস্যকে আটক করেছে।
মৃত ছাত্র নিশান নুর হাদী উপজেলার পূর্ব একলাশপুর গ্রামের আনোয়ার মিয়ার ছেলে। সে ওই মাদ্রাসার নুরানি বিভাগের প্রথম শ্রেণির ছাত্র ছিল।
আটককৃতরা হলেন- সোনাইমুড়ি উপজেলার ঘোষকামতা গ্রামের জয়নাল আবেদীনের ছেলে হাফেজ মো. দাউদ ইব্রাহীম, সুবর্ণচর উপজেলার মাওলানা মাইনুদ্দীন, লক্ষ্মীপুর জেলার রামগতি উপজেলার মাওলানা জহিরুল ইসলাম, হাতিয়া উপজেলার চর কৈলাশ গ্রামের আবুল বাশারের ছেলে হাফেজ মাওলানা মিজানুর রহমান হাসান, বেগমগঞ্জ উপজেলার দুর্গাপুর গ্রামের আব্দুল কাদেরের ছেলে হাফেজ মো. বেলাল হোসাইন, বেগমগঞ্জ উপজেলার পূর্ব একলাশপুর গ্রামের ইউসূফ সরদারের ছেলে হাফেজ মো. ইসমাঈল।
নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন মোজ্জামেল হোসেন, পারভেজ, আবদুর রহিম, আশিক, মেহেরাজ, শান্ত ও নুর হাসানসহ ১৬ ছাত্র জানায়, সোমবার দুপুরের দিকে মাদ্রাসায় ছাগলের মাংস রান্না করা হয়। দুপুরে আমরা আবাসিক বিভাগের ২০ জন ছাত্র সবাই ওই মাংস দিয়ে ভাত খেয়েছি। তখন মাংস ছিল শুকনো।
তারা বলে, এশার নামাজের পর ওই মাংস দিয়ে আমরা ১৮ জন পুনরায় রাতের খাবার খাই। রাতে মাংসে ঝোল ছিল। মাংসে কিছুটা উটকো গন্ধ ছিল, মাংস মুখে নেওয়ার পর মুখ অনেকটা তিতা হয়ে যায় এবং মাথা চক্কর দিয়ে উঠে। রাত সাড়ে ৯টার দিকে আমাদের সবারই পেটে ব্যথা ও বমি শুরু হয়।
মাদ্রাসার তত্ত্বাবধায়ক হাফেজ মো. ইসমাইল হোসেন জানান, ছাত্রদের অসুস্থতার কথা শুনে স্থানীয় এক পল্লী চিকিৎসককে মাদ্রাসায় ডেকে আনা হয়। তিনি প্রথমে অসুস্থ ছাত্রদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেন। এর মধ্যে অসুস্থ ছাত্র নিশান নুর হাদী মারা যায়। সঙ্গে সঙ্গে পল্লী চিকিৎসকের পরামর্শে অসুস্থ ছাত্রদের নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে নেয়া হয়।
তিনি আরও জানান, তাদের মাদ্রাসার আবাসিক বিভাগে প্রতিদিন ৭০ ছাত্র খাবার খায়। রাতে ১৮ জন খাবার খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়লে অন্যদের তা আর দেয়া হয়নি।
ফেরদৌসী আক্তার, আমির হোসেনসহ হাসপাতালে উপস্থিত ছাত্রদের অভিভাবকরা বলেন, ইতোপূর্বে ওই মাদ্রাসায় বাচ্চাদের খাবারে এ ধরনের সমস্যা হয়নি। দুপুরেও একই খাবার খেয়েছে বাচ্চারা, তখনো কোনো সমস্যা হয়নি। নিশ্চয়ই রাতে খাবারের সঙ্গে কেউ না কেউ বিষাক্ত কোনো দ্রব্য মিশিয়ে দিয়েছেন। তা না হলে একসঙ্গে খাবার খাওয়া সবগুলো বাচ্চার এ সমস্যা হতো না। এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে মূল রহস্য উদ্ঘাটন করার দাবি জানান তারা।
নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক (আরএমও) সৈয়দ মহিউদ্দিন আব্দুল আজিম বলেন, খাবারে বিষক্রিয়ার কারণেই ছাত্ররা অসুস্থ হয়ে পড়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। অসুস্থদের মধ্যে নিশান নামে এক ছাত্র হাসপাতালে আনার আগেই মারা যায়। হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ১৭ জন ছাত্রের মধ্যে রিফাত হোসেন নামের একজনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় প্রেরণ করা হয়েছে। বাকি ১৬ জনের অবস্থা উন্নতির দিকে রয়েছে। তবে তারা শঙ্কামুক্ত কিনা ২৪ ঘণ্টার আগে তা বলা যাচ্ছে না।
বেগমগঞ্জ থানার ওসি মুহাম্মদ কামরুজ্জামান সিকদার ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। রাতের ওই খাবারের নমুনা পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। নিহত ছাত্র নিশান নুর হাদীর চাচা বাদী হয়ে ৮ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেছেন। ওই ঘটনায় ৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের নোয়াখালীর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
নোয়াখালীর সিভিল সার্জন ডা. মাসুম ইফতেখার জানান, এ ঘটনায় জেলা প্রশাসন ও সিভিল সার্জন কার্যালয়ের সমন্বয়ে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট তারিকুল আলমকে প্রধান করে তিন সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন হাতে পেলে আইনি প্রক্রিয়া শুরু করা হবে।
Array