Publish: Wednesday August 4, 2021 | 1:21 am  |  অনলাইন সংস্করণ

 dhepa 

বেশির ভাগেরই অফিস নেই, শুধু অনলাইনে একটি ওয়েব পেজ। এ রকম ৬৭টি ওয়েব পেজসর্বস্ব কম্পানি পণ্য কেনাবেচায় বিভিন্ন ধরনের লোভনীয় অফার ও মুনাফার আশ্বাস দিয়ে কৌশলে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে সাত হাজার ২৫৬ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে বিদেশে পাচার করেছে। এসব প্রতিষ্ঠানে টাকা দিয়ে তিন ভাগের দুই ভাগ গ্রাহকই পণ্য পাননি, প্রতারিত হয়েছেন।

এসব প্রতিষ্ঠানের প্রকৃত মালিকরা নিজেদের পরিচয় গোপন রেখে বা অন্যের নাম ব্যবহার করে এ কাজ করেছেন। তাঁরা ২০১৯ সাল থেকে ওয়েব পেজগুলোর মাধ্যমে গ্রাহক সংগ্রহ করে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে এ অপকর্ম চালিয়েছেন। এসব প্রতিষ্ঠানের কোনো নিবন্ধন নেই, সরকারি কোষাগারে এক টাকাও ভ্যাট-ট্যাক্স দেয়নি।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা শাখা সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স সেলসহ (সিআইসি) অন্যান্য গোয়েন্দা সংস্থার যৌথ তদন্তে নামসর্বস্ব এসব প্রতিষ্ঠানের অপকর্ম ধরা পড়েছে। গত মাসের শেষ সপ্তাহে সিআইসি থেকে এনবিআর চেয়ারম্যানের দপ্তরে এসংক্রান্ত তদন্ত প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ধাপে ধাপে ওই ৬৭ কম্পানি চিহ্নিত করে তাদের ওয়েবসাইটগুলো অকার্যকর করা হয়েছে। গোয়েন্দারা কম্পানিগুলোর প্রকৃত মালিকদের খোঁজ করছেন। তাঁদের সন্ধান পেলেই আটক করে কঠোর শাস্তির আওতায় আনা হবে। একই সঙ্গে তাঁদের ব্যাংক হিসাবও তলব করা হবে।

সিআইসির তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, এসব প্রতারক কম্পানির ওয়েবসাইটে যাঁদের মালিক বলে পরিচয় দেওয়া হয়েছে, তাঁরা প্রকৃত মালিক নন, তাঁরা মালিকের নিয়োগ করা কর্মচারী। তাঁরা মালিকের বিস্তারিত পরিচয়ও জানেন না। বেতন হিসেবে এসব কর্মচারীকে মোটা অঙ্কের টাকাসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হতো। পণ্য আনার নাম করে তাঁরা একাধিকবার বিদেশ সফরও করেছেন। এসব কম্পানি অর্ধেক দামে পণ্য বিক্রি বা পণ্য কিনলেই মুনাফা—এ রকম মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে অর্থ নিয়েও বেশির ভাগ ক্ষেত্রে পণ্য সরবরাহ না করে বিদেশে অর্থ পাচার করে দিয়েছে।

তদন্ত প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ৬৭ কম্পানির মধ্যে রিনিউ লেবেল নামের একটি প্রতিষ্ঠানের গ্রাহকসংখ্যা প্রায় ৭৯ হাজার; এটি ১২৩ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। জিও ফেসের গ্রাহকসংখ্যা প্রায় এক লাখ ৯ হাজার; এটি হাতিয়ে নিয়েছে ৯৭ লাখ টাকা। ব্র্যান্ড নিউয়ের গ্রাহকসংখ্যা প্রায় ৮১ হাজার ৪৫৭; এটি হাতিয়ে নিয়েছে প্রায় দুই কোটি ৯৬ লাখ টাকা। আলী জানের গ্রাহকসংখ্যা প্রায় এক লাখ ৩০ হাজার; হাতিয়ে নিয়েছে ১৫৬ কোটি টাকা। চায়না প্রডাক্টের গ্রাহকসংখ্যা প্রায় তিন লাখ; হাতিয়ে নিয়েছে ২৩৪ কোটি টাকা। সোহানা-নাফি চেইনের গ্রাহকসংখ্যা প্রায় ৭৫ হাজার; এটি হাতিয়ে নিয়েছে ৯৭ লাখ টাকা।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ওই ৬৭ কম্পানির গ্রাহক হওয়ার প্রক্রিয়াও ছিল খুব সহজ। বিকাশ, নগদ বা যেকোনো মোবাইল ব্যাংকিং লেনদেনের মাধ্যমে ধাপে ধাপে ৫০০ থেকে এক হাজার ২০০ টাকা পাঠিয়ে কম্পানির গ্রাহক হতে হয়েছে। এরপর কী পণ্য কিনবে, তা ওয়েবসাইটে গিয়ে নির্ধারণ করতে হয়েছে। ১০ হাজার টাকার বেশি দামে পণ্য কিনলে বোনাস হিসেবে একাধিক পণ্য দেওয়ার প্রতিশ্রুতি ছিল। কম্পানির ওয়েবসাইটে এসব কম্পানির প্রতিটি পণ্যের মূল্য বাজারমূল্যের চেয়ে প্রায় অর্ধেক দাম বলে স্পষ্ট উল্লেখ ছিল। এ ছাড়া ওয়েবসাইটে বলা হয়েছিল, পণ্য কিনতে অর্ডার করার তিন দিনের মধ্যে সম্পূর্ণ মূল্য পরিশোধ করতে হবে, এককালীন পরিশোধে অন্য পণ্য বোনাস হিসেবে দেওয়া হবে এবং পণ্য হাতে পেতে এক মাস থেকে ৪০ দিন সময় লাগবে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সিআইসির এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘পণ্যের মূল্য হিসেবে অর্থ পরিশোধ করলেও ওই ৬৭ কম্পানি তিন ভাগ ক্রেতার মধ্যে প্রায় দুই ভাগ ক্রেতাকেই পণ্য সরবরাহ করেনি। এভাবে নামসর্বস্ব ওই কম্পানিগুলো হাজার হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে পাচার করেছে। বিভিন্ন ক্রেতার অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত করতে গিয়ে এসব তথ্য-প্রমাণ মিলেছে। প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রকৃত মালিকদের খুঁজে বের করার চেষ্টা চলছে। আশা করি, শিগগিরই তাদের আটক করা সম্ভব হবে।’

বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত মিনহাজুল আবেদীন নামের প্রতারিত এক গ্রাহক কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘৩২ ইঞ্চি স্মার্ট একটি টেলিভিশন কেনার জন্য টাকা দিয়েছিলাম। বাজারে ওই টিভির দাম ৩২ হাজার টাকা থাকলেও ওই কম্পানি বলেছিল ১৫ হাজার টাকায় দেবে। এ জন্য তিন দিনের মধ্যে টাকা দিলে টিভির সঙ্গে একটি রাইস কুকার ফ্রি দেওয়া হবে বলেও জানিয়েছিল কম্পানিটি। টাকা দিয়ে ছয় মাসেও সেই টিভি আর পাইনি।’

সিআইসির তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, রাজধানীসহ বিভিন্ন বিভাগীয় ও জেলা শহরে ওই ৬৭ কম্পানির অফিস আছে বলে ওয়েবসাইটে উল্লেখ থাকলেও বাস্তবে ১৩টির অফিসের খোঁজ পাওয়া গেছে। এগুলোও একটি বা দুটি রুম নিয়ে অল্প পরিসর জায়গায়। এসব অফিসে দুই-তিন দিনে বা সপ্তাহে একজন বা দুজন এক-দুই ঘণ্টার জন্য যেতেন। বেশির ভাগ সময়ই এসব অফিস ছিল বন্ধ। অফিসেও ছিল দামি আসবাব। এসব প্রতিষ্ঠান কম দামে পণ্য সরবরাহের প্রতিশ্রুতি দিয়ে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহ করেছে।

প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের ওয়েবসাইটে থালা-বাসন, বসার ঘরের শোপিস থেকে শুরু করে ঘর-গৃহস্থালিতে ব্যবহৃত পণ্য, বিছানার চাদর, পর্দা, বালিশের কভার, পাপোশ, জুতা-স্যান্ডেল, ব্যাগ, পোশাক, প্রসাধনী, জুয়েলারি, কম্পিউটার যন্ত্রাংশ, মোবাইল ফোন, মোবাইল ফোনে ব্যবহৃত গ্লাস আবরণী ও কভার, আসবাব, এসি, ফ্রিজ, টিভি, ব্লেন্ডার টোস্টার, পাউরুটি চেকার যন্ত্র, কুকারসহ বিভিন্ন ধরনের পণ্য বাজারমূল্যের চেয়ে প্রায় অর্ধেক দামে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে বিভিন্ন চটকদার বিজ্ঞাপন দিয়েছে।

তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ৬৭টি ভুয়া কম্পানি পরিকল্পিতভাবে কাজ করেছে। মোবাইলের বিভিন্ন নম্বরে এসব প্রতিষ্ঠান এসএমএস পাঠিয়ে কম দামে পণ্য বিক্রির কথা জানিয়েছে। ওয়েব পেজসর্বস্ব প্রতিষ্ঠানের ক্রেতাদের বেশির ভাগ বয়সে তরুণ-তরুণী। এরা ফ্যাশনসচেতন। তরুণদের অর্ডারকৃত পণ্যের তালিকা বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, গ্রাহকরা জুতা, পোশাক, জুয়েলারি, প্রসাধনী, কম্পিউটার যন্ত্রাংশ, মোবাইল ফোনে ব্যবহৃত সামগ্রী বেশি অর্ডার করেছে। এ ছাড়া গৃহিণীরা বেশির ভাগ এসি, ফ্রিজ, টিভি এবং সংসারে ব্যবহৃত পণ্য অর্ডার করেছেন। এসব প্রতিষ্ঠান অনলাইনে পণ্য বিক্রিতে রাজধানী ও বিভাগীয় শহরের চেয়ে জেলা-উপজেলার ক্রেতাদের সঙ্গে বেশি যোগাযোগ করেছে।

Array
We use all content from others website just for demo purpose. We suggest to remove all content after building your demo website. And Dont copy our content without our permission.
আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

আর্কাইভ

December 2024
M T W T F S S
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
3031