Publish: Tuesday December 14, 2021 | 5:53 am | অনলাইন সংস্করণ
দেশে নারীর প্রতি সহিংসতা, বিশেষ করে ধর্ষণ, হত্যা ও যৌন নিপীড়নসহ পারিবারিক নির্যাতন বৃদ্ধির বিষয়টি উদ্বেগজনক। বেসরকারি সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) এ বছরের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত নয় মাসের মানবাধিকার লঙ্ঘনের সংখ্যাগত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, যেখানে বলা হয়েছে- এ সময়কালে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ৯৭৫ জন নারী, যার মধ্যে একক ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ৭৬২ জন এবং সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ২০৮ জন।
এদের মধ্যে ধর্ষণের পর হত্যার শিকার হয়েছেন ৪৩ জন এবং আত্মহত্যা করেছেন ১২ জন নারী। একই সময়কালে ১ হাজার ৭৮ শিশু শারীরিক নির্যাতনসহ নানা সহিংসতার শিকার হয়েছে এবং হত্যার শিকার হয়েছে ৪৪৫ শিশু।
নারী ও শিশু নির্যাতনমূলক অপরাধ কঠোর হাতে দমনের উদ্দেশ্যে সরকার ২০০০ সালে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন প্রণয়ন করেছে। তারপরও দেশে নারী ও শিশু নির্যাতনের হার কমছে না কেন, এর উত্তর খোঁজা জরুরি। যথাযথ আইন প্রয়োগের মাধ্যমে অপরাধীর কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করা গেলে অপরাধের মাত্রা কমে আসবে-এতে কোনো সন্দেহ নেই। একইসঙ্গে এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসহ সমাজের সর্বত্র জনসচেতনতা সৃষ্টির উদ্যোগ নিতে হবে।
দেশের জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক নারী। ১৯৭২ সালে নবগঠিত রাষ্ট্র বাংলাদেশের সংবিধানে নারীর মানবাধিকার ও মৌলিক স্বাধীনতা নিশ্চিত করে তদানীন্তন সরকার নারী উন্নয়নকে অগ্রাধিকার প্রদান করে। দেশে নারী উন্নয়নের লক্ষ্য সামনে রেখে মহিলা ও শিশুবিষয়ক একটি পৃথক মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। পাশাপাশি মহিলা বিষয়ক অধিদফতর এবং বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা সংস্থা নারী উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে।
শুধু রাষ্ট্রীয় পর্যায়েই নয়, আন্তর্জাতিক পর্যায়েও নারীর অধিকার ও উন্নয়ন আন্দোলনের অংশীদার হিসেবে বাংলাদেশ জাতিসংঘ ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক সম্মেলন ও কনভেনশনে অংশগ্রহণ করেছে এবং সমর্থন প্রদান করেছে। এ প্রেক্ষাপটে দেশে নারী ও শিশুদের নির্যাতন ও নিপীড়নের শিকার হওয়ার বিষয়টি মেনে নেয়া যায় না। বস্তুত নারী নির্যাতন রোধে আইনের যথাযথ প্রয়োগ যেমন জরুরি, তেমনি জরুরি নারীর প্রতি সমাজের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন। নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা রোধে সরকার কার্যকর পদক্ষেপ নেবে-এমনটাই প্রত্যাশা।
Array