Publish: Wednesday August 4, 2021 | 8:42 am  |  অনলাইন সংস্করণ

 dhepa 

আমেরিকার শিকাগোতে অনুষ্ঠিতব্য ৩য় বিশ্ব কংগ্রেসে (২০১৮ সালের ২৬-২৭ সেপ্টেম্বর) অংশ নেওয়ার জন্য শিকাগোতে যাওয়ার সুযোগ হয়েছিল।

আমি ‘Midwifery & Neonatal Nursing– 2018’ এ ‘Neonatal Nursing is a Holistic Approach– Needs Bottom Lining’ বিষয়ে উপস্থাপন করেছি। ভারতের ‘ACTA SCIENTIFIC NUTRITIONAL HEALTH’ জার্নালের Volume 3 তে ২০১৯ সালের ৭ জুলাই ‘Sustainability of Saving Mother and Newborns: Needs Bottom Lining Holistic Approach’ শিরোনামে প্রকাশিত হয়েছে।

শিকাগো তৃতীয় বিশ্ব কংগ্রেস শেষ হওয়ার একদিন আগেই ছোট ভাই মাসউদুর রহমান মিঠু টরেন্টো থেকে শিকাগো চলে আসে। উদ্দেশ্য আমাদের কানাডায় নিয়ে যাওয়া।

হোটেল হলিডে ইন-এ একত্রিত হলাম। ২৭ সেপ্টেম্বর মিসেস শিবলী ছেলেসহ হোটেলে এলেন আমাদের তার বাসায় নিয়ে যাওয়ার জন্য। আমরাও প্রস্তুত ছিলাম। তিনি নিজেই ড্রাইভিং করে আমাদের নিয়ে গেলেন। শিকাগো শহরের নয়নাভিরাম দৃশ্য দেখতে দেখতে আমরা তার বাসায় পৌঁছলাম। তিনি আমাদের দেশের চট্টগ্রামের মিরেরসরাইয়ের বাসিন্দা।

মি. শিবলীর ৩ মেয়ে ১ ছেলেসহ ২ যুগেরও বেশি সময় ধরে শিকাগো বসবাস করছেন। দেশ থেকে আরবি পড়ায় উচ্চ শিক্ষা (মাওলানা) শেষ করে আমেরিকা এসেছেন। বিশাল আলিশান ডুপ্লেক্স বাড়ি। ড্রইং, ডাইনিং, রিডিং রুম সব মিলে আভিজাত্যে ভরপুর।

দোতলায় আমাদের থাকার ব্যবস্থা করলেন। নিচ তলা গেস্ট রুমে মিঠুর থাকার ব্যবস্থা হলো। বাড়ির তিন দিকেই সবজি বাগান। কচু, ঘেচু, লতি, শসা সবই রয়েছে বাগানে। মাচায় শসা, লাউয়ের ডগা শোভা পাচ্ছে। ঘুরে ঘুরে সবজি বাগান দেখলাম। মি. শিবলীর বাগান থেকে তোলা কচি শসা খেয়ে ছোটবেলার নানা-দাদা বাড়ির সবজি বাগানের কথা মনে পড়ে গেল। তহুরা বেয়াইন বাগানের লাউ রান্না করে আমাদের খাওয়ালেন। খেতে প্রচণ্ড সুস্বাদু।

শিবলীর ভগ্নিপতি আলেম মাওলানা রুহুল আমিন স্ত্রীসহ ইমিগ্রান্ট হয়ে ছেলের বাসায় অবস্থান করছিলেন। বিদেশ বিভূঁয়ে বন্দি জীবন মনে হওয়ায় দেশে ফেরত যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। মিঠুসহ প্রায় ৩ দিন আমরা বেড়ালাম, ঘুরলাম।

মি. শিবলীর নিজের পারফিউম কারখানা রয়েছে। এর মার্কেটিং ব্যবস্থাপনায় তিনিই দেখাশুনা করেন। প্রচণ্ড ব্যস্ত সময় কাটান তিনি। এই ব্যস্ততার মধ্যেই একদিন আমাদেরকে নিয়ে বের হন তিনি।
সড়কের দু’ধারে ছবির মতো রং বেরঙের বাগান। সারি সারি গাছ গাছালি. ফুল। সবুজে সুশোভিব। এরই ফাঁকে বাহাই সম্প্রদায়ের বিশাল উপাসনালয় দেখলাম। যা পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে গর্জিয়াস স্থাপনা। পাঠাগার, প্রাথর্নালয়, হল-লন, স্বচ্ছ পানির ফোয়ারা, লেক, মাছ, ফুল-ফলাদি সবুজ সুসজ্জিত প্রাকৃতিক দৃশ্য, স্বর্গীয় এক পরিবেশ।

শিকাগো শ্রম ঘণ্টা ও মজুরি অধিকার আন্দোলনের সূতিকাগার। যার স্মরণে ‘দুনিয়ার মজদুর এক হও’ স্লোগানে ১ মে উদযাপিত হয়। মনে প্রশ্ন জাগে, বাংলাদেশের মতো উঠতি দেশে মজুরি ও শ্রম ঘণ্টা শিকাগোর মতো উন্নত দেশের কি সামঞ্জস্য আছে? মি. শিবলী-বাংলাদেশিদের উদ্যোগে নির্মিত বিরাট আধুনিক মসজিদ, মহিলাদের নামাজের স্থান, পাঠাগারসহ সব তলায় ঘুরে ঘুরে দেখলাম।

ধর্মীয় কর্মযজ্ঞ সৃষ্টির বহিঃপ্রকাশ দেখে আমি আনন্দে উদ্বেলিত হলাম। মসজিদ থেকে ফেরার পথে তিনি আমাদের নোয়াখালীর রেজা উকিলের ছোট ভাইয়ের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন। আমার উদ্যোগে প্রকাশিতব্য ‘একজন মুসলমান নিরক্ষরের আল কুরআনের সহজ বুঝ’ গ্রন্থটি মসজিদের পাঠাগারে ও সংশ্লিষ্ট বাংলাদেশিদের কাছে পৌঁছানোর দায়িত্ব নেন শিবলী ভাই। বইটি পাওয়া যাচ্ছে দারউস সুন্নাহ মসজিদ এবং কমিউনিটি সেন্টার, ২০৪৫, ব্রাউন এভিনিউ, ইভান সেটন, শিকাগো, ইউএসএ।

শিবলী বেয়াইয়ের বাংলাদেশের বাড়ি ও আমরা একই স্থানে-আলেকজান্ডার, রামগতি, লক্ষ্মীপুর। তাদের পীর খান্দানি বাড়ি, বিখ্যাত দায়রা শরিফ। তার বাবা গদি নিশিন মাওলানা আবদুল মালেক, বুজুর্গান, সর্বজন গ্রহণীয় আলেম প্রতিনিধি। দেশীয় ধাঁচের খান্দানিগিরি বিদেশেও শিবলী বেয়াই আতিথিয়েতা. চলাফেরা রক্ষা করে চলেছেন।

ছোট ভাই মাসউদ মিঠুর একদিন পেটে গণ্ডগোল হয়। তার ডা. রাজিয়া ভাবির সঙ্গে আনা চিড়া ও ওষুধ খেয়েই মিঠু সুস্থ হলো। বেয়াই শিবলী টরেন্টোর উদ্দেশ্যে শিকাগো এয়ারপোর্টে পৌঁছিয়ে দেন। ধন্যবাদ বেয়াই-বেয়াইন- ধন্যবাদ শিকাগো।

শিকাগো থেকে কানাডার টরেন্টোতে সামাজিক, পারিবারিক ও টরেন্টো সিটি নির্বাচন পর্যবেক্ষণের কাজে অংশগ্রহণ নিলাম। টরেন্টোতে প্রায় ২০ দিন অবস্থান করলাম। এখানেও অনেক কিছু দেখার সুযোগ হলো। বিদেশে গেলে দেশীয়দের টান আরও বেড়ে যায়, আত্মীয় হলে তো কথাই নেই।
সম্পর্কে আমার ভাতিজা কমল (মহসিন হাওলাদার বাড়ির)। ২ ঘণ্টা ড্রাইভিং করে আমার সঙ্গে দেখা করতে এসেছেন স্ত্রী, বাচ্চা, মা-সহ। সঙ্গে এনেছেন আমার জন্য দামি সিকো ঘড়ি। ওর ডাক্তার চাচির জন্য আরও কত কি! ওদের দেখে এক অনাবিল আনন্দ অনুভব করলাম। একদিন মিঠুর ঢাকা বিশ্ববিদ্যায়ের সিনিয়র মেইট এবং ইন্ডিয়ানা স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. প্রফেসর জেনী সন্তানসহ তিন ঘণ্টা ড্রাইভ করে এসেছেন আমাদের সঙ্গে দেখা করার জন্য।

তার সঙ্গে গ্রাম-দেশ উন্নয়ন, প্রকল্প, অধিকার ইত্যাদি বিষয় নিয়ে আলাপচারিতায় সময়টা ভালোই কাটল। ভবিষ্যতে কোনো উন্নয়ন প্রকল্প নিয়ে কাজ করার কথা বললেন। অনেক বছর পর তার সঙ্গে দেখা হওয়ায় মিঠুও খুশি।

এরপর ২০০০ সালে আবার আমার ইন্ডিয়ানায় যাওয়ার সুযোগ হয়। সেবার ভাগনি সুমি ও জামাই রনির ড্রাইভিং করে আমাদের, শাহানাজ-ফারুক পরিবার এবং ডালাস নয়ন, বিউটি, ফুফাতো ভাই আকবরের বাসা থেকে বেড়ানো শেষে ওকলাহামায় নিয়ে আসছিল। মাঝ পথে সুমিকে কোনো এক ছোট শহরে থামাতে বলেছিলাম। ইচ্ছা সেখানকার পরিবেশ ও ওয়াশ রুম দেখা।

ইন্ডিয়ানার ওয়াশ রুমে গিয়ে আমার তাক লাগার জো। পরিচ্ছন্ন ছিমছাম কিন্তু মালয়েশিয়ার মতো ঝকঝকে নয়। বাংলাদেশ ইন্ডিয়া সৌদি আরও অনেক পিছিয়ে। এ্যলি নামে মধ্যবয়সি একজন নারী শপিং থেকে বের হয়ে গাড়িতে উঠতে যাচ্ছেন। এমন সময় আমি একটু এগিয়ে গিয়ে বললাম, আমি বাংলাদেশি। ফ্যামিলিসহ ওকলাহামা বেড়াতে যাচ্ছি।

তাকে বললাম, তোমাদের দেশের গ্রাম ও পরিবেশ পরিস্থিতি এবং তোমাকে দেখতে আসলাম। এ কথা শুনে ওরা হেসে উঠলেন। বুঝলাম ওরা আমাকে আন্তরিকতার সঙ্গে গ্রহণ করেছে। আলাপচারিতার এক ফাঁকে জিজ্ঞেস করলাম, বাড়ি কোন দিকে, কি করেন?

প্রত্যুত্তরে বললেন, কাছেই থাকেন। নিজের মুরগির খামার আছে। ডিপার্টমেন্টাল স্টোরে দৈনন্দিন বাজার করার জন্য এসেছেন। তাকে ধন্যবাদ জানিয়ে আমার ভিজিটিং কার্ডটি দিলাম। বললাম-আগামী ১৬ আগস্ট আমি বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় পৌঁছব।

আপনার একটি ইমেইল রিসিভ করব। তাহলে বুঝবো যে, আপনি আমাকে পছন্দ করেছেন, আমাকে মনে রেখেছেন। দেশে ফিরে ১৬ তারিখে আমি তার ইমেইল পেয়েছি।

লেখক: বেসরকারি সংস্থা ডরপের প্রতিষ্ঠাতা ও গুসি আন্তর্জাতিক শান্তি পুরস্কার বিজয়ী

Array
We use all content from others website just for demo purpose. We suggest to remove all content after building your demo website. And Dont copy our content without our permission.
আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

আর্কাইভ

October 2024
M T W T F S S
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
28293031