Publish: Wednesday August 4, 2021 | 8:42 am  |  অনলাইন সংস্করণ

 dhepa 

সাতলা নামের মধ্যেই আছে এক অন্যরকম আদিমতা। প্রকৃতির যত সৌন্দর্য তার সবটুকুই আদিমতার মধ্যে। আধুনিকতার আড়ালে আজ অনেক বুনো সৌন্দর্য যেন বিলীন। তবে নয়াকান্দি গ্রামটা এখনো ব্যতিক্রম। বলছি বরিশাল জেলার উজিপুরের নয়াকান্দি গ্রামের সাতলা বিলের কথা।

অনেক বছর ধরে যাই যাই করে যাওয়া হয়নি। এবার সুযোগ মিলে গেল। দুই দিনের ট্রিপ। বুধবার রাতে লঞ্চে চড়ি। আমার আবার লঞ্চে ভ্রমণ খুবই কম করা হয়েছে। সদরঘাট হতে লঞ্চ ছাড়ে রাত ৯টায়। সব ঠিক থাকলে বরিশাল ঘাটে পৌঁছবে ভোর ৪টায়। এ দীর্ঘসময় ফেসবুকিং, গল্পগুজব আর একটু ঘুমিয়ে কাটিয়ে দিলাম। জাহাজ পৌঁছল সময়মতো। ঘাট থেকে অটোতে করে চলে যাই শহরের ১নং পুলঘাট বন্ধুর বাড়ি। বৃহস্পতিবার পুরো দিন ওদের সঙ্গে আড্ডা, নাশতা, বিশ্রাম, ভোজন, অতঃপর বিকালে বরিশাল শহরের প্ল্যানেট পার্কে ঘোরাঘুরি করে কেটে গেল। রাতের লঞ্চে লিটন ভাইয়েরাও আসবেন।

সাতলা বিলের ফুটন্ত লাল শাপলা দেখতে হলে যতটা সম্ভব ভোরে পৌঁছতে হবে উজিপুর। তাই সেলফোনে তাদের বারবার বলতে হচ্ছে যেন ১ মিনিটও নষ্ট না হয়। বরিশালবাসীর জনপ্রিয় বাহন মাহেন্দ্রর চালক গিয়াসকেও সেভাবেই বলা। আমিও আজ বেশি রাত না জেগে মোবাইলে অ্যালার্ম দিয়ে ঘুমিয়ে পড়ি।

 

সকালের ফাঁকা রাস্তার সুযোগে দেড় ঘণ্টার মধ্যেই পৌঁছাই নয়াকান্দির কালবিলা। সড়কের পাশেই খেয়াঘাট। গাড়ি থেকে নেমেই হুড়মুড় করে নৌকায় বসি। দূর থেকেই চোখে ধরা দেয় লাল শাপলা। ছোট নৌকা এগিয়ে যায়। যতই এগোই, ততই যেন চোখে-মুখে মুগ্ধতা।

এক সময় নিজেকে আবিষ্কার করি বিশাল লালের মধ্যে। লাল শাপলার রাজ্যে নৌকা চলে, আমি অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে রই। পুরো সাতলা বিলটিই মনে হয় ফরাসি লাল মখমলে ঢাকা। যুগল ছাড়া তখনো কোনো পর্যটক আসেননি। ফলে বিলের মধ্যে একটা নিঝুম ভাব। মাঝে মধ্যে টুপটাপ মাছের লাফঝাঁপ। সাতলা বিলের চারপাশ পুরোটাই নৈসর্গিক। বিশাল আয়তনের এ সাতলা বিল থেকে অনেক পরিবার শাপলা বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করে।

 

থই থই পানির বুকে মাথা উঁচু করে থাকা, সবুজে ঘেরা বিচ্ছিন্ন বাড়িগুলোর সৌন্দর্য বেশ দৃষ্টিনন্দন। আর নারকেল গাছে থাকা থোকায় থোকায় ডাব তৃষ্ণার্ত ভ্রমণপিয়াসীদের বেশ হাতছানি দেয়।

মাঝি মতিলাল রায় জানালেন, আগে এখানে সাদা ও বেগুনি শাপলা ফুটত। এখন আর দেখা যায় না। তিনি প্রায় ৫০ বছর ধরে বিলটিতে এ রকম হাজার হাজার শাপলা ফুটতে দেখছেন। আগে তেমন পর্যটক আসতেন না। এখন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বিপুলসংখ্যক দর্শনার্থীর আগমন ঘটে। এতে স্থানীয় বাসিন্দাদের আর্থিক সচ্ছলতা এসেছে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মানুষের আনাগোনাও বাড়তে থাকল। ধীরে ধীরে নৈঃশব্দ ভাবটা উবে গেল পর্যটকদের বিচরণে।

 

গ্রামটা ঘুরে দেখি। বরিশাল থেকে গোপালগঞ্জ যাওয়ার জন্য কচা নদীর ওপর নবনির্মিত সেতুর ওপর দাঁড়িয়ে এক অন্যরকম প্রকৃতি উপভোগ করি। কচা নদীর চারপাশে চোখ জুড়ানো সব প্রাকৃতিক দৃশ্য।

সকাল প্রায় সোয়া ১০টায় আবার পানিতে ভাসি। ততক্ষণে শাপলা অনেকটাই গুটিয়ে যাচ্ছে। হঠাৎ দৃষ্টিতে এলো, বিলের এক পাশটায় সাদা সাদা কি যেন ভাসছে। মাঝি জানালেন ডেপ ফুল। নৌকা সেদিকটায় গেল। অদ্ভুত সুন্দর দৃশ্য। সোশ্যাল মিডিয়ার কল্যাণে জানতে পারলাম, এগুলো চাঁদমালা ফুল। ডেপ আঞ্চলিক নাম। সত্যি বলতে কি, আমি এ ফুলের নাম কখনো শুনিনি। ফুলের নামও যেমন চাঁদমালা, এর বিচরণও তেমন। মালার মতোই পানিতে ভেসে আছে।

যেভাবে যাবেন: প্রতিদিন রাত সাড়ে ৮টা থেকে ৯টা পর্যন্ত বেশ কয়েকটি বিলাসবহুল লঞ্চ সদরঘাট থেকে বরিশালের উদ্দেশে ছাড়ে। লঞ্চ টার্মিনাল থেকে রিজার্ভ মাহেন্দ্র অথবা নথুল্লাবাদ থেকে বাসে উজিরপুর উপজেলার হারতার নয়াকান্দি।

খরচ: জাহাজের ডেকে ভাড়া জনপ্রতি ১৫০ টাকা ও কেবিন ১ হাজার টাকা থেকে ৫ হাজার টাকার ওপরে। মাহেন্দ্র সারা দিনের জন্য ২ হাজার টাকা। নৌকা ভাড়া দরদাম করে নেয়াই ভালো।

Array
We use all content from others website just for demo purpose. We suggest to remove all content after building your demo website. And Dont copy our content without our permission.
আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

আর্কাইভ

October 2024
M T W T F S S
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
28293031