Publish: Wednesday December 15, 2021 | 6:24 am | অনলাইন সংস্করণ
প্রশ্ন: মাস্ক পরিধান করে নামাজের বিধান সম্পর্কে অনেকে প্রশ্ন করেছেন। আগে কখনও এমন পরিস্থিতি না হলেও বর্তমানে সরকারিভাবে মাস্ক পরে নামাজ আদায়ের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এমতাবস্থায় মুখে মাস্ক পরে নামাজ পড়লে তা কি আদায় হবে?
উত্তর: শরিয়তের বিধান হলো নামাজ পড়ার সময় নাকেমুখে কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখা মাকরুহ।
কেননা হাদিস শরিফে এসেছে— আবু হুরাইরাহ (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে কোনো ব্যক্তিকে নামাজরত অবস্থায় তার মুখমণ্ডল ঢাকতে নিষেধ করেছেন। (সুনানে ইবনে মাজাহ-১০১৯)
অপর হাদিসে এসেছে— হজরত আবু সাঈদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কাদাপানির মাঝে সিজদা করলেন। এমনকি আমি তার কপালে ও নাকে কাদার চিহ্ন দেখতে পেলাম। (সহিহ বুখারি, হাদিস নং-২০৩৬)
উল্লিখিত হাদিসগুলোতে নাক, মুখ ঢেকে নামাজ পড়তে নিষেধ করা হলেও অসুস্থতা ও অপারগতার বিষয়টি ভিন্ন। যেহেতু বর্তমান পরিস্থিতিতে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ থেকে বাঁচার জন্য মানুষকে বাধ্য হয়ে মুখে মাস্ক পরে নামাজ আদায় করতে হচ্ছে।
কারণ ইসলাম কখনই মানুষের ওপর তার সাধ্যের বাইরে কিছু চাপিয়ে দেয় না।
পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে— ‘আল্লাহ কারও ওপর সামর্থ্যের অতিরিক্ত বোঝা চাপিয়ে দেন না।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ২৮৬)।
তাই এই বিপদের মুহূর্তে (রোগাক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকায়) মুখে মাস্ক পরে নামাজ আদায় করাতে শরিয়া পরিপন্থী হবে না।
প্রয়োজনে মুখমণ্ডল ও সিজদার স্থানে কাপড় রেখে নামাজ পড়ার বিষয়টি হাদিসে বর্ণিত আছে— আনাস ইবনু মালিক (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, প্রচণ্ড গরমের মধ্যে আমরা আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে নামাজ আদায় করতাম। আমাদের কেউ মাটিতে তার চেহারা (কপাল) স্থির রাখতে সক্ষম না হলে সে তার কাপড় বিছিয়ে তার ওপর সেজদা করত। (সহিহ বুখারি, হাদিস নং-১২০৮)
ওলামায়েকিরাম তিন সময়ে নামাজে মুখমণ্ডল ঢেকে রাখাকে বৈধ মনে করেছেন
এক. হাসি বা হাই আসার সময়
দুই. কারও মুখে যদি এ রকম দুর্গন্ধ থাকে, যা মুসল্লিদের কষ্ট দেয় অথবা কারও মুখে যদি কোনো রোগ থাকে।
তিন. কোনো মহিলা যখন গাইরে মাহরাম পুরুষদের সামনে নামাজ পড়বে।
মাস্ক পরিধান করে নামাজ আদায়ের সময় নাক ও কপাল জমিনে ঠেকাতে হবে। যদি মাস্কের কারণে নাক ও কপাল জমিনে না ঠেকে, তা হলে নামাজ হবে না।
যেহেতু করোনাভাইরাস খালি চোখে দেখা যায় না। আমরা জানি না যে, আমরা নিজেরা আদৌ এই ভাইরাস থেকে মুক্ত আছি কিনা? কিংবা যে মানুষটির সংস্রবে আমি যাচ্ছি তিনি এই মরণঘাতী ভাইরাস থেকে মুক্ত কিনা?
তাই আমাদের উচিত সর্বদা সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা। এবং এটিই ইসলামের শিক্ষা। তাই আমরা জামাতে নামাজ আদায়ের ক্ষেত্রেও অবশ্যই সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করব।
মহান আল্লাহ আমাদের সকলকে এই মরণব্যাধি থেকে হেফাজত করুন। আমিন।
Array