Publish: Tuesday December 14, 2021 | 5:25 am | অনলাইন সংস্করণ
বাংলাদেশের ইতিহাসে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের অনুপ্রেরণা, সাহস, মনোবল ও শক্তির সূচনাই ছিল ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন। ভাষার দাবিতেই মূলত পাকিস্তানিদের সাথে আমাদের আন্দোলনের সূচনা। আমরা বাংলাদেশিরা ভালোবাসতে জানি, ভালোবাসাতেও জানি । বাংলাদেশিরা শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিবাদ করতে জানি আবার অস্ত্র হাতে যুদ্ধ করে বিজয় ছিনিতে আনতেও পারি। আমরা প্রতিবাদী হলেও সম্মানশীল।
আমরা শান্তিপ্রিয় মুসলমান কিন্তু মৌলবাদী বা জঙ্গি নই। আমাদের দেশে মুসলমান, হিন্দু ও অন্যান্য ধর্মাবলীর মানুষ পাশাপাশি তাদের ধর্ম উৎসব গুলো যুগের পর যুগ ধরে পালন করে আসছে শান্তিপূর্ণ ভাবে যা পৃথিবীর ইতিহাসে অতুলনীয়। যেমন আমাদের পুরান ঢাকা।
বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠতা মুসলমান হলেও সব ধর্মাবলীদের জন্য আমাদের দেশে সরকারি ছুটির ব্যবস্থা যা উদারতার দিক থেকে হার মানায় আমেরিকাসহ পশ্চিমা বিশ্বের দেশ গুলোকে যেখানে এখনও মুসলমান, হিন্দু ও অন্যান্য ধর্মাবলীদের জন্য কোন সরকারী ছুটি দেওয়া হয় না।
মেধায় আমাদের বাংলাদেশের ছেলেমেয়েরা আজ পৃথিবীর উন্নত দেশগুলোতে সুনামের সাথে নিজেরদের স্থান করে নিয়েছে। মতপ্রকাশের স্বাধীনতার দেশ, গণতন্ত্রের প্রথম শুরু হওয়া দেশ, দুইশ বছর ভারতবর্ষ শাসন করা দেশ ইংল্যান্ড যেখানে আজ সংসদ সদস্য পদে রয়েছে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত তরুণীরা।
এছাড়াও ব্যাপক সাফল্যতায় রয়েছে কানাডা, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া সহ ইউরোপের সকল দেশে। এগুলো সবই আমাদের দেশের গর্ব। কিন্তু পক্ষান্তরে আমাদের মাতৃভূমি যা আমাদের দিবে সামনে এগিয়ে চলার প্রেরণা অথচ আমরা প্রবাসীরা নিজের দেশ নিজের মাতৃভূমি নিয়ে হচ্ছি হতাশাগ্রস্ত। কিন্তু কেন? শুধুই কি নিজ কেন্দ্রিক চাহিদা মেটাতে আমাদের দেশের অসাধু ব্যবসায়ীরা দেশটাকে চিড়ে চিড়ে শেষ করে দিবে?
স্বাধীনতার ৫০ বছর হয়ে গেছে তবুও কি ছাড়বে না অসাধু রাজনৈতিকরা আমাদের দেশটাকে? রাজনীতির অন্তরালে রাজনীতি বাংলাদেশে। পৃথিবীর মানচিত্রে যত উন্নত দেশ মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে রয়েছে তার মূলে রয়েছে রাজনীতি। তবে ঐ রাজনীতি মানুষের জন্য নিজের জন্য নয় এই বিশ্বাসেই তারা পৃথিবীর মানচিত্রে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে। এছাড়াও রয়েছে মানুষের মানব অধিকার রক্ষায় অধিকতর সোচ্চার। আর পৃথিবীর যত গরিব অনুন্নত দেশগুলো রয়েছে তার মূলেই রয়েছে রাজনীতিক প্রতিহিংসা, দুনীতি ও মানব অধিকার লঙ্ঘন।
ঠিক তেমন আমাদের বাংলাদেশেও একই সমস্যা ,নাই কোন নীতি, নাই কোন শুদ্ধ রাজনীতি হচ্ছে মানব অধিকার লঙ্ঘন প্রতি পদে পদে, নাই বাক স্বাধীনতা, নাই নিরাপত্তা, নাই একে অপরের প্রতি শ্রদ্ধা, মায়া, সম্মান ও ভালোবাসা।
কিন্তু কেন? শুধু কি শিক্ষার অভাবে এই মানসিকতা? না, আমাদের দেশে তো এখন শিক্ষার হার অনেক ভালো। তাহলে সমস্যা কোথায়?
সমস্যা কোথায়? সমস্যা একটাই পেশা হিসেবে রাজনীতিক ব্যবসা চলছে খোলামেলা, ঐ দিন তথা ৭১-এর মুক্তির আন্দোলনের আবেগ তা তো খেয়ে ফেলেছে অশুভ মহল, সেই আবেগ যেই আবেগ জাগিয়েছিলও পুরোটা জাতিকে ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য সেই সাড়া আর আমাদের ১০০ বছরেও আসবে না।
বাংলাদেশের ইতিহাসে অন্তত ১ জন সংসদ সদস্যও সৎ খুঁজে পাওয়া যাবে না। বাংলাদেশের মানুষ আজ বন্দি রাজনীতিক নেতাদের কাছে জানিনা সেই স্বপ্নের দেশ কবে গড়তে পারব। তবে শুনে রাখো অসাধু নেতারা কোটি কোটি যুবক এখনো বাংলাদেশসহ বহি:বিশ্বে ছড়িয়ে আছে যারা জাগবেই কোনো না কোনো দলের হয়ে।
গত কয়েক দশকে দেশ ও জাতি আশা করেছিল কয়েক জন তরুণদের কাছে তারা হয়তো একটা পরির্বতন দেশে আনতে হয়তো সক্ষম হবে কিন্তু হতাশ দেশবাসী সেই সব তরুণরাও বাণিজ্য করে নিল ও নিচ্ছে যার যার স্থান থেকে।
রাজনীতিতে শেষ বলতে কোন কথা নেই তাই যেখানেই বাধা আসবে সেখান থেকেই নতুন পথে যাত্রা শুরু হবে সৎ ও আর্দশের আলোকে। সমস্ত দেশবাসীসহ তরুণদেরকে আবারো আকুল আবেদন জানাচ্ছি আসুন আমরা সুন্দর, সুস্থ, স্বচ্ছ, পরিষ্কার রাজনীতি আমাদের দেশে চালুর উদ্যোগ নেই, যেই রাজনীতিতে থাকবে না পেশা হিসেবে রাজনীতি, থাকবে না কুখ্যাত ব্যক্তিদের ভিড়, থাকবে না রাজনীতির অন্তরালে রাজনীতি।
এখনো কি আমরা একে অপরের হিংসা, ভেদাভেদ, দণ্ডতা থেকে বের হয়ে আসতে পেরেছি? আমরা কি হতে পারবো না মালয়েশিয়া অথবা সিঙ্গাপুরের মতো একটি দেশ ?
আমাদের বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রতিহিংসা কী বন্ধ করা যাবে না? আমরা কি ৭১-এর মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় জাগ্রত হতে পারবো না? আরেকবার অসাধু ব্যবসায়ী রাজনীতিবিদদের পিছনে ফেলে দেশ প্রেমিক, আদর্শবান রাজনীতিবিদদের সামনে নিয়ে এসে দেশটাকে সুন্দর করে গড়ে তুলতে কি আমরা পারবো না? যে দেশে থাকবে না ভাইয়ের প্রতি ভাইয়ের দণ্ড, থাকবে না রাজনৈতিক প্রতিহিংসা।
আমরা পারবে, আমাদের পারতেই হবে। কারণ আমাদের প্রবীণ প্রজন্মরা যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছে, আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান, তাই আমাদের জানতে হবে ৭১-এর মুক্তিযুদ্ধের চেতনা কী ছিল?
এক কথায় বলতে গেলে চেতনাটি হচ্ছে নিজের জীবন থেকে অন্যের জীবনকে বেশি প্রাধান্য দেওয়া। অর্থাৎ নিজে না খেয়ে অন্যকে খাওয়ানো, নিজের শান্তিতে নয় বরং অন্যের শান্তিতে তৃপ্তি পাওয়া। যেমন- ৭১-এর মুক্তিযুদ্ধে মানুষ নিজে না খেয়ে মুক্তিযোদ্ধা ও শরণার্থীদের খাইয়েছিল, নিজে না ঘুমিয়ে মুক্তিযোদ্ধা ও শরণার্থীদের ঘুমানোর জন্য জায়গা দিয়েছিল, নিজেদের জীবন দিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের জীবন রক্ষা করেছি; আর এই হলো মুক্তিযুদ্ধের চেতনা।
সবাইকে আপন করে নিয়ে মাকে অর্থাৎ দেশকে আর সন্তানকে অর্থাৎ জাতিকে রক্ষা করতে ৭১-এর মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় জাতিকে জাগ্রত করতে হবে ।
আজ বাংলাদেশে দুর্নীতি মিশে গিয়েছে রন্ধ্রে রন্ধ্রে। যেমন- একজন রিকশাচালক তার যতটুকু সামর্থ্য রয়েছে সে ততটুকুই দুর্নীতি করছে, অপরিচিত বা বহিঃগত শহর থেকে আগত যাত্রীদের ভুল পথে ঘুরিয়ে ভাড়া নিচ্ছে দ্বিগুণ। আর প্রশাসন তারা তো অনেক ঊর্ধ্বে। এরকম ঘর থেকে শুরু করে স্কুল, কলেজ, অফিস, আদালত, বাজার-ঘাট সর্বত্র দুর্নীতিতে ছেয়ে গেছে, যেন দুর্নীতি আজ হয়ে গিয়েছে খুবই সাধারণ একটি ব্যাপার। কিন্তু সবকিছুর ঊর্ধ্বে দেশপ্রেম ছাড়া মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এ জাতির ভিতরে পুনরায় আসা সম্ভব না।
তারপরও এর প্রতিরোধ আমাদেরই করতে হবে, যে যার স্থান থেকে। আর এই প্রতিরোধের জন্য আরেকবার আমাদের জাগিয়ে তুলতে হবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা।
(লেখক ও কলামিস্ট)